ভাড়া ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে তিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
ভাড়া ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে তিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। এর ব্যত্যয় ঘটতে যাচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া বাসায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিরোজপুর ও কুড়িগ্রাম) এখনো শিক্ষক নিয়োগের জন্য বোর্ড গঠন সম্পন্ন হয়নি।
এছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরো ভবন ভাড়া নেয়ার পরিকল্পনা চলছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আরো অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে গণিত, মনোবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে জেলা সদরে একজন ব্যবসায়ীর আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে। এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে অবকাঠামো নির্মাণ করতে আরো তিন-চার বছর সময় প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরো এক বা একাধিক ভবন ভাড়া নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া টেক্সটাইল মিলের ভবন ভাড়া নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবার কৃষি ও মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগে ৪০ জন করে ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হতে দেড়-দুই বছর পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যখন স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে জোর দেয়া হচ্ছে তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করাটা কাম্য নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউটি অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক ড. মো. আব্দুল হেলাল। তিনি বলেন, ‘ভাড়া ভবনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করাটা দুঃখজনক। বাকি সব বিষয় যেমনই হোক ভালো শিক্ষক, প্রয়োজনীয় গবেষণাগার নিশ্চিত করতেই হবে। নিজস্ব ক্যাম্পাসে কিছু অবকাঠামো নির্মাণ এবং শিক্ষক নিয়োগের পর যদি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, তাহলে ওই শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সহজ হবে।’
পারিপার্শ্বিক কারণে অবকাঠামো নির্মাণের আগে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থী না থাকলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় না। আবার এমনও হয় রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমই বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থী থাকলে এটি সম্ভব হয় না। সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসিও) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো দ্রুত করতে বাধ্য হয়।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) দেবদাস দত্ত মজুমদার বলেন, ‘আমরা কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে ইউজিসির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা চূড়ান্ত অনুমতি দিলেই ভবন ভাড়া নেব। একাডেমিক-প্রশাসনিক ছাড়াও ছাত্রদের জন্য এবং ছাত্রীদের জন্য আলাদা হোস্টেলের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস না হলেও শিক্ষার্থীদের খুব একটা ভোগান্তি হবে না।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগে অবকাঠামো নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই অন্তত কিছু অবকাঠামো থাকলে কার্যক্রম পরিচালনা সুবিধাজনক হয়, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কম হয়।’
পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, ‘ন্যূনতম অবকাঠামো নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্প অনুমোদন-বাস্তবায়ন বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা গেলে এবং কম সময়ে সম্পন্ন করা গেলে দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হতো।’
শিক্ষার মানের বিষয়ে এ উপাচার্য জানান, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। নিয়োগ বোর্ডের ফাইল মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এটি পাস হয়ে এলেই শিক্ষক নিয়োগ শুরু হবে। আর যেসব বিভাগ চালু হবে সেগুলোতে ল্যাব বলতে শুধু কম্পিউটার প্রয়োজন। তাই খুব একটি সমস্যা হবে না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন নিয়েও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য কিছু শর্ত নির্ধারণ করে একটি নীতমালা তৈরি করেছিল ইউজিসি। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, ন্যূনতম ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নকারী কমিটির সদস্য সচিব এবং ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক মৌলি আজাদ বলেন, ‘আমরা গত বছর নীতিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালাটি এখনো অনুমোদন হয়নি এবং নীতিমালার কিছু জায়গায় সংশোধনের জন্য আবারো ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. হাসিনা খান এবং আমাকে সদস্য সচিব রেখে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। শিগগিরই কমিটি বিষয়টি নিয়ে বসবে।’
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতি বেশ আগে দেয়া হয়েছে। তবে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই ন্যূনতম ভৌত অবকাঠামো ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেয়া হবে না। বর্তমানে প্রায় ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যাদের অবকাঠামোগত সংকট রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নতুন তিনটিসহ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিত না হলে আর কোনো বিভাগ অনুমোদন দেয়া হবে না।
সার্বিক বিষয়ে ইউজিসিরি সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, এখন দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে আগে অবকাঠামো নির্মাণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করলেই ভালো হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষে কোনো শিক্ষার্থী যেন উচ্চশিক্ষিত বেকারে পরিণত না হয়। সে যাতে জনসম্পদে পরিণত হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
Leave a Reply